মো. আককাস আলী, স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁয় চালের বাজারে মোটা চাল না পাওয়ায় স্বল্পআয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে । দাম বেড়েছে সব ধরনের চালের। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষসহ স্বল্পআয়ের পরিবারগুলো। কিছু দোকান, ও আড়তে ওইসব মোটা চাল মিললেও তা পাইকারিতে ৪১–/৪২ টাকা ও খুচরায় ৪৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বোরো মৌসুমের শুরুতে দেশের অন্যতম এই মোকামে প্রতি কেজি মোটা চাল পাইকারিতে ৩৬/–৩৭ টাকা ও খুচরায় ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নওগাঁ শহরের অন্যতম মোকাম আলুপট্টির পাইকারি বিক্রেতা নিতাই চন্দ্র বলেন, ‘গত বছরে যে মোটা চাল ২৬-২৭ টাকা বেচেছি, এখন তার দাম ৪১-৪২ টাকা। গত ঈদুল আজহার আগেও মোটা চাল কেজিতে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মধ্যম মানের জিরা ও কাটারি চালের দামও গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।’
মুদি দোকানি অনিল চন্দ বলেন, ‘এখন খুচরায় মধ্যম মানের জিরাচাল৪৭/৪৮ টাকা ও কাটারি ৪৫/৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড ধানের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২/৮৪৩ টাকায়। তবে এই চালের সরবরাহ নেই বললেই চলে। মিলমালিকদের চাহিদা পাঠালেও মজুত না থাকার কথা বলে আমাদের চাল দিচ্ছে না। তাই নিম্ন আয়ের মানুষেরা বর্তমানে বেশি দামে মধ্যম মানের কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।’
এদিকে বাজারদরের তুলনায় সরকারের ক্রয়মূল্য কম হওয়ায় নওগাঁর অধিকাংশ মিলার (চালকলমালিক) চুক্তি করেও নির্ধারিত সময়ে সরকারি গুদামে চাল দেননি। চুক্তিবদ্ধ এসব চালকলমালিককে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও গুদামে চাল দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এ অবস্থায় সরকারি গুদামে বোরো ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এর আগে ছিল গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। নওগাঁয় বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় গত ২৬ এপ্রিল।জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ১১টি উপজেলার ১৯টি সরকারি খাদ্যগুদামের জন্য ৯৬১টি চালকল থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ৪৯ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে ৬ হাজার ৫১ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২৮ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও ১ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন আতপ চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া নওগাঁ জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে ৪ হাজার ৪৬ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ শতাংশ।
মিলারদের দাবি, সরকারি ক্রয়মূল্য মানলে প্রতি কেজিতে ৫–৬ টাকা করে লোকসান দিয়ে গুদামে চাল দিতে হয়। এতে প্রতি মেট্রিক টনে ন্যূনতম লোকসান দাঁড়ায় পাঁচ হাজার টাকা। সে জন্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধানের বর্তমান বাজার অনুযায়ী চালের সরকারি ক্রয়মূল্য পুনর্র্নিধারণের দাবি জানান তাঁরা।
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘সরকারনির্ধারিত ক্রয়মূল্যের সঙ্গে উৎপাদন খরচের বিস্তর ফারাক হওয়ায় সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করে চালকল মালিকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লোকসান সত্ত্বেও চুক্তি অনুযায়ী গুদামে চাল দেওয়ার জন্য আমরা সংগঠনের পক্ষ থকে মিলারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তারপরও মিলাররা গুদামে চাল দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।’ফরহাদ হোসেন জানান, সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা আরও এক মাস বৃদ্ধ এবং ক্রয়মূল্য বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন। যাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। কিন্তু সংগ্রহের সময়সীমা ১৫ দিন বাড়ানো হলেও ক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হয়তো চুক্তিবদ্ধ সব মিলার গুদামে চাল দিলে ক্ষতির শিকার হবেন। এতে তাঁদের ওপর একপ্রকার জুলুম হবে বলে মনে করেন তিনি। জেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব চালকল মালিক সরকারি গুদামে চাল দেবেন না তাঁদের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
সম্প্রতি মহাদেবপুর উপজেলার একটি মিলে র্যাব অভিযান চালিয়ে চালের অবৈধ মজুত রাখার দায়ে ওই মিলমালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। জেলা প্রশাসনও শিগগিরই অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবেন।
কমেন্ট করুন